1. haimcharbarta2019@gmail.com : haimchar :
টোকাই থেকে মাহাতাব হোসেন চৌধুরী হওয়ার গল্প - হাইমচর বার্তা
রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০২:০০ অপরাহ্ন

টোকাই থেকে মাহাতাব হোসেন চৌধুরী হওয়ার গল্প

  • Update Time : মঙ্গলবার, ১৩ জুন, ২০২৩
  • ১১৪ Time View

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ রাজশাহী টার্মিনালের ছিচকে মাস্তান ও টোকাই থেকে হঠাৎ বনে যান রাজশাহী জেলা মোটর ইউনিয়নের সদস্য, এরপর সন্ত্রাসী কায়দায় বাগিয়ে নেন সাধারণ সম্পাদক পদ। তিনি নারী লোভী অর্থ লুটপাট ও নানা অপকর্মের শ্রমিক নেতা। পরিচিত হয়ে উঠেছেন মাদক ও জুয়াসহ মাফিয়া ডন মাহাতাব হোসেন চৌধুরী। বর্তমানে তিনি ২৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। দু দুবারের এই নিরক্ষর কাউন্সিলর প্রার্থী ওয়ার্ডেও তৈরি করেছেন চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসী দল, ও কিশোর গ্যাং নামে মাফিয়া দল। যার বড় হাতিয়ার এখন শ্রমিক ও কিছু টোকাই। ওয়ার্ডসহ জেলাজুড়ে তিনি এখন মাফিয়া ডন হিসেবে পরিচিত। ভূমিদখনসহ এমন কোনো অপকর্ম নাই, যেখানে তার বিচরণ নাই। নারীরা তাঁর নিকট যেতেও ভয় পায়। এমনি তাঁর চেম্বারে সব সময় যুবতী নারীদের দেখতে পাওয়া যায়। আন্ডারগ্রাউন্ড ঘরে চলে শরীল মালিশ। এক নারীকে পেতে ঐ পরিবারকে মামলা হামলা দিয়ে ধ্বংস করেছেন এই মাফিয়া ডন মাহাতাব। মেয়েটিকে রক্ষিতা করতে মরিয়া হয়ে, শেষে সফল হয়েছেন তিনি। এমন বহু পরিবারের মেয়েদের দিকে কুদৃষ্টি দিয়েছে সে। নির্বাচনীয় হলফনামায় তার সম্পদের বিষয়ে তথ্য গোপন রাখেন তিনি।।সংগঠনের শ্রমিকদের চাঁদার টাকা, শ্রমিক কার্ড বিক্রি, ভবনসহ জমি বিক্রির অন্তত ২০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে তার বিরুদ্ধে, যা বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। এছাড়াও কাউন্সিলর হিসেবে জড়িয়েছেন নানা অপকর্মে। ওয়ার্ডে আছে তার টর্চার সেল। ওয়ার্ডে তাঁর বিপক্ষে কেউ কথা বললেই ওই টর্চার সেলে চলে নির্যাতন।

শ্রমিক সংগঠনের সভার সিদ্ধান্ত ছাড়া বেআইনিভাবে আনুমানিক ৭০০ সদস্য কার্ড বিক্রি করেছেন। এ হিসাবে সদস্য কার্ডের মূল্য ২১ লাখ টাকা; যা সম্পূর্ণ আত্মসাত করা হয়েছে। রাজশাহী বাইপাস সংলগ্ন ললিতাহার মৌজার ১৯ কাঠা জমির (দলিল নম্বর-৯৪১৭) মধ্যে ১৬ কাঠা বিক্রি করেছেন পানির দামে। মাত্র ১ কোটি ৬০ লাখ টাকা দাম দেখিয়ে বাকি অন্তত ১০ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন মাহাতাব। টার্মিনালের পাশে মেইন রোড সংলগ্ন শিরোইল মৌজার একতলা আরসিসি পাকা বিল্ডিংসহ জমির পরিমাণ .০৯৭৭ শতাংশ (দলিল নম্বর- ৬২৪২) রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনয়নের নামে। এটি জনৈক হাশেম আলীর কাছে ১ কোটি টাকায় বিক্রি করেছেন মাহাতাব হোসেন চৌধুরী। কিন্তু বর্তমানে বিল্ডিং ও জমির দাম প্রায় ৮ কোটি টাকা। এই টাকাও এককভাবে আত্মসাত করেছেন তিনি। তার কাছে শেয়ারহোল্ডার মূল্যে জমির মালিক সদস্যগণ হিসাব চাইতে গেলে প্রাণ নাশের হুমকি দেন। কার্ডের মাসিক চাঁদা বন্ধ করে দেন। এসব ঘটনায় তার বিরুদ্ধে শ্রমিকরা একাধিক মামলাও করেছেন।

এক দশক ধরে রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন চৌধুরী। সম্পাদক হওয়ার পরে তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। শ্রমিক ইউনিয়নের অর্থ লুটপাট করে হয়েছেন ১০টি বাসের মালিক। বাস মালিক হয়েও তিনি শ্রমিক নেতা। একসময় সে ছিলো টোকাই ও ছিচকে মাস্তান। আর এখন থাকেন পাঁচতলা বাড়িতে। আরেকটি ১০ তলা অট্টালিকা নির্মাণের পরিকল্পনা চলছে। চড়েন অর্ধকোটি টাকা মূল্যের ল্যান্ড ক্রুজার গাড়িতে। দীর্ঘদিন ধরে শ্রমিক ইউনিয়নকে দেননি আয়-ব্যয়ের হিসাব। রয়েছে অডিট আপত্তি। অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির মাধ্যমে মাহাতাব গড়েছেন অঢেল সম্পদ।

শ্রমিক ইউনিয়নের নতুন সদস্য কার্ড বিক্রি, জমি বিক্রি, দুই তলা ভবন বিক্রি, বিভিন্ন পরিবহণ থেকে দৈনিক চাঁদা আদায়, দুটি শাখা কার্যালয় বিক্রিসহ বিভিন্ন খাত থেকে মাহাতাব এ বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। রাজশাহীর নওদাপাড়া বাস টার্মিনালে শ্রমিকদের উন্নয়নের কথা বলে মেলার আয়োজন করে আত্মসাৎ করেছেন কয়েক কোটি টাকা। শিরোইল বাস টার্মিনালে চলে জুয়ার আসর। এখান থেকেও মাহাতাবের পকেটে ঢুকছে প্রতিরাতে লক্ষাধিক টাকা। (তথ্য প্রমাণ সংগৃহীত)

এছাড়া শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা থেকেও বঞ্চিত করেছেন মাহাতাব। দেননি মৃত্যুকালীন ও কন্যাদায়গ্রস্ত বাবার অনুদান, শ্রমিকদের সন্তানদের শিক্ষা ভাতা, শ্রমিকনেতাদের সম্মানি এবং কর্মচারীদের বেতনভাতা। এর মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।

রাজশাহী মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন সূত্রে জানা যায়, ২০১৩ সালে সর্বপ্রথম তিন বছরের জন্য সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মাহাতাব। এরপর থেকেই বেপরোয়া হয়ে উঠেন তিনি। ইউনিয়নে তৈরি করেন একক আধিপত্য। নিয়ন্ত্রণ নেন সবকিছুর। পাশাপাশি ঘটে তার রাজনৈতিক উত্থান।

এ সময় মাহাতাব রাজশাহী মহানগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদটি বাগিয়ে নেন। এরপর ওই বছরেই রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। দলের শীর্ষ এক নেতাকে ম্যানেজ করে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের শ্রমবিষয়ক সম্পাদকের পদটিও দখলে নেন তিনি। তবে তিনি এখন বহিস্কৃত নেতা।

১০টি যাত্রীবাহী বাসের মালিক মাহাতাব। এর মধ্যে চারটি বাস স্ত্রীর নামে রয়েছে। বাকিগুলোর মালিক মাহাতাব হলেও সেগুলো বিভিন্ন নামে-বেনামে চলছে। এসব বাসের আনুমানিক মূল্য চার কোটি টাকা। রাজশাহীর অন্য বাস মালিকরা একদিন পরপর রাস্তায় চলার (রুট পারমিট) অনুমতি পান। কিন্তু মাহাতাবের বাস এ নিয়মের মধ্যে নেই। সাধারণ সম্পাদক হওয়ার দাপটে তার বাস উত্তর এবং দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন রুটে প্রতিদিনই চলাচল করে। কিন্তু হলফনামায় তিনি এবিষয় গুলোর তথ্য গোপন রাখেন। তিনি নিজ নামে একটি গাড়ি ও স্ত্রীর নামে চারটি গাড়ি’র মালিকানা দেখিয়েছেন।

এছাড়া প্রতিদিন বিভিন্ন পরিবহণ থেকে দৈনিক আয় হয় ৫০ হাজার টাকা। এরও কোনো হিসাব নেই। শুধু এ খাত থেকে মাহাতাব প্রতিমাসে প্রায় ১৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। জেলার বাঘা এবং গোদাগাড়ী শাখা কার্যালয় সাত লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন তিনি। সেই টাকারও হিসাব দেননি।

মাহাতাব শ্রমিকদের বকেয়া টাকা পরিশোধ করছেন না। প্রায় একশ শ্রমিকের মৃত্যুকালীন অনুদানেরর টাকা বকেয়া রয়েছে। এর পরিমাণ প্রায় ৮০ লাখ টাকা। দীর্ঘ সময়েও মৃত শ্রমিকদের পরিবারের লোকজন এসব টাকা পাননি। কন্যাদায়গ্রস্ত শ্রমিকের সংখ্যা রয়েছে প্রায় আড়াইশ। প্রত্যেক কন্যাদায়গ্রস্তকে শ্রমিক ইউনিয়ন থেকে ৪০ হাজার টাকা করে পাওয়ার নিয়ম রয়েছে।

হিসাবে এক কোটি টাকা আটকে রেখেছে

শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আরও
© স্বর্বস্বত্ব সংরক্ষিত। এই ওয়েবসাইটের লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Customized By BreakingNews